Site icon Insightful Daily

নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু সম্পর্কে বক্তৃতা/ Best Speech About Netaji

সুভাষ চন্দ্র বসু

সুভাষ চন্দ্র বসু

আজকে আমরা এক মহাপুরুষের কথা বলব, যার নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা নয়, গড়া হয়েছে। তিনি নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, যার জীবন ছিল এক জ্বলন্ত শিখা, যে পুড়িয়ে ছারখার করেছে অবিচারের অন্ধকারকে। কিন্তু আমরা শুধু জানি তার বিদ্রোহের গর্জন, আজ আসুন ভেদ করে দেখি সেই গর্জনের পিছনে লুকানো অচেনা কীর্তির কাহিনী।

সুভাষ চন্দ্র বসুর স্বদেশে প্রেম

মানুষ চেনে তার স্বদেশপ্রেম, কিন্তু জানেন কি, কেমব্রিজে পড়াকালীন সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেও তিনি কেন সেই পথ অবলম্বন করেননি? এটা কি আবেগের আবেশে, নাকি দেশপ্রেমের দাবীতে? না, তিনি ভারতের স্বাধীনতার জন্য গোপনে কাজ করছিলেন ‘যুগান্তর’ নামক বিপ্লবী সংগঠনের সদস্য হিসেবে। বিদেশি শাসনের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি, তথ্য ফাঁস, এমনকি বিপ্লবী অস্ত্র তৈরির পরীক্ষা – এই সংগঠনের কাজ ছিল রোমাঞ্চকর গোপন অভিযানের এক ধারাবাহিক নাটক।

সুভাষ চন্দ্র বসুর বিদেশ ভ্রমণ:

১৯৩৩ সাল। হিটলার ক্ষমতায় আরোহণের পর ইউরোপের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। নেতাজী তখন ভারতে। ঠিক সেই সময় তিনি জার্মানিতে যান, কী উদ্দেশ্যে? একটা স্বাধীন ভারত গঠনের জন্য সেখানকার নেতৃত্বের সঙ্গে গোপন কূটনৈতিক আলোচনায়। অজ্ঞাত এক ইতিহাস, আমাদের বইগুলোতে লেখা নেই, কিন্তু নেতাজীর ডায়েরিতে রয়েছে সেই গোপন মিশনের ইঙ্গিত।

জার্মানিতে নেতাজী কীভাবে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বন্দী থেকে পালিয়েছিলেন? সে এক সিনেমাটিক গল্প। একটি গাড়ি চালিয়ে, আত্মগোপনের ছদ্মবেশে, পুরো প্লাটুনের মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া, মাত্র ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্য দেশে পৌঁছে! ইতিহাসে এমন পালানোর কাহিনী আর কারো নেই।

জার্মানি থেকে সাবমেরিনে করে এশিয়ায় যাওয়ার পথেও কম রোমাঞ্চকর নয়। দু’ঘণ্টা ধরে জলের নিচে, অক্সিজেনের অভাবে প্রায় মৃত্যুর মুখে, ইতিহাস গড়ার এক জোরালো দৃঢ়তার নিদর্শন।

আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন:

এবার আসি আজাদ হিন্দ ফৌজের কথায়। স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন দেখানো, প্রায় ৮৫ হাজার ভারতীয় সৈন্য নিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কাহিনী। কিন্তু জানেন কি, এই ফৌজ গঠনের আগে নেতাজী
এশিয়ায় পৌঁছেই নেতাজী স্বাধীনতার লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। জাপানি সরকারের সহযোগিতায় তিনি গঠন করেন প্রথমে ভারতীয় স্বাধীনতা লীগ, তারপর আজাদ হিন্দ ফৌজ। কিন্তু সহজ ছিল না পথ। জাপানিরা চাইছিল ভারতকে তাদের নিজের মতো করে নিয়ন্ত্রণ করতে, নেতাজী চাইছিলেন সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। দুজনের মধ্যে মতবিরোধ ছিল, কিন্তু নেতাজী ছাড়লেন না। তিনি গঠন করলেন স্বাধীন ভারত সরকার, তৈরি করলেন নিজের মুদ্রা, জাতীয় পতাকা। এমনকি গঠন করলেন ‘স্বাধীন বাণী’ নামক রেডিও স্টেশন, ভারতকে জাগানোর বাণী ছড়ানোর জন্য।

আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে নেতাজী আক্রমণ শুরু করলেন ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব সীমান্তে। ইম্ফল, কোহিমা – প্রতিটি যুদ্ধে তার সৈন্যদের বীরত্ব গাঁথা হয়ে উঠলো ইতিহাসে। কিন্তু যুদ্ধের ভাগ্য নির্ধারণ করে গেল মৌসুম। অপ্রস্তুত মৌসুমে পড়ে আজাদ হিন্দ ফৌজকে পিছনে হটতে হলো।

নেতাজী কি হতাশ হলেন? না। তিনি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে উঠলেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে বার্মা হয়ে ভারতে প্রবেশ করার পরিকল্পনা। কিন্তু এই সময়ই ঘটলো সেই রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনা। ১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট, তাইপেই থেকে ম্যানমার যাওয়ার পথে নেতাজীর বিমান দুর্ঘটনার কবল গ্রাসে। জীবিত ফিরলেন না তিনি।

নেতাজীর মৃত্যু এখনও রহস্য। একজন মহান নেতার আকস্মিক অবসান আগে থেকেই জল্পনা আর ষড়যন্ত্রের জন্ম দেয়। কিন্তু এসব তর্কের ঊর্ধে নেতাজীর অবদান, তার সাহস, তার দৃষ্টিভঙ্গি।

নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন কেবলমাত্র স্বাধীনতার নেতা নয়, তিনি ছিলেন একজন রূপকার, একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। তিনি দেখেছিলেন এক নতুন ভারত, শক্তিশালী, আত্মর্নিভর, বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো। সেই স্বপ্নের বীজ বপন করে গেছেন তিনি, বাকি কাজ আমাদের। আমাদেরই সেই বীজকে গাছ হতে হবে, তার ছায়ায় স্বাধীনতার ফল খেতে হবে।

নেতাজির জীবনের শেষ দিনগুলি অত্যন্ত রহস্যময় এবং ভারতের ইতিহাসে একটি মিষ্টি অধ্যায়। তিনি অনেক বছর ধরে পাকিস্তানের কাঠগড়ায় বা মানে মৃত্যুবর্ষে জীবিত রয়েছেন কিন্তু তার মৃত্যু আজও অদ্ভুত একটি রহস্য।

নেতাজী আমাদের শিখিয়েছেন সাহস, শিখিয়েছেন আত্মবিশ্বাস, শিখিয়েছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তি। আসুন, এই গুণগুলো নিয়েই আমরা এগিয়ে যাই, এক স্বপ্নের ভারত গঠনের পথে, নেতাজীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে। আমরা সমাপ্ত করি এই অপরিসীম এবং অজানা দিকের নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর এই বক্তব্য। তার জীবনের এই ঘটনা গুলি তার উদ্দীপনা, সাহস এবং বৈশিষ্ট্যগুলির এক নজরে দেখতে পারতে আমরা একটি অদৃশ্য পথে চলতে পারি এবং আমাদের দেশের ইতিহাসে এই মহান নেতা সুভাষ চন্দ্র বসুর অসম্পর্কিত বিষয়গুলি আমাদের জনগণের কাছে জানা যাবে।

Exit mobile version